ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় (২০২৪ সালে ২২ টি দুর্দান্ত পদ্ধতি )

আপনার মাথায় কোন না কোন সময় এই চিন্তাটি এসে থাকতে পারে ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায় কি হতে পারে। চলুন আজ আলোচনা করব এমন ২২ টি দুর্দান্ত পদ্ধতি যেটি অনুসরণ করলে আপনার ব্যাটারি লম্বা সময় ধরে চলবে। এবং আপনার ব্যাটারির স্বাস্থ্য থাকবে ভালো।

মোবাইল ব্যাটারি চার্জ করার অভ্যাস:

আমরা সকলেই মোবাইল চার্জ দিয়ে থাকি কিন্তু এই কথা একবারও ভেবে দেখি না কিভাবে চার্জ দিলে মোবাইলের ব্যাটারি অনেক দিন বা লম্বা সময় ধরে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই ভালোভাবে চলবে। সেই সঙ্গে ব্যাটারির ব্যাকআপ তুলনামূলকভাবে ধরে রাখার ক্ষমতা বজায় থাকবে।

 মোবাইল চার্জ দেওয়ার পদ্ধতি :

ব্যাটারি চার্জ বেশি থাকার উপায়

আজ থেকে কিছু বছর আগে কেউ কেউ মনে করত ব্যাটারিকে ১০০% পর্যন্ত চার্জ করতে হবে তারপর 0% পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে এতে ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো থাকে । এই পদ্ধতিটি আপনারা অনুসরণ করবেন না।

এই উন্নত বিজ্ঞানের যুগে ব্যাটারী ও অনেক স্মার্ট হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় শুনে থাকতে পারেন মোবাইলের ব্যাটারিকে ২০% থেকে ৮০% পর্যন্ত চার্জ করলে ভালো থাকে। তবে আমি বলব আপনি এই পদ্ধতি ব্যবহার না করতে । আপনি আপনার মোবাইলকে যখনই সময় পাবেন যে স্থানে পাবেন সে স্থানেই চার্জ করবেন। তবে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল আপনি আপনার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ কখনোই ০ % এর নিচে নামতে দিবেন না এবং ওভার চার্জিং করবেন না তবে ১০০% এর নিচে চার্জ রাখলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়।

আমরা অনেকেই আছি যে মোবাইল ১০০% চার্জ হওয়া সত্বেও চার্জার এর দিয়ে রাখে এটা খুব একটা ভালো পদ্ধতি নয় এতে আপনার ব্যাটারির কন্ডিশন খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় তাই আপনি এই অভ্যাসটি অবশ্যই পরিবর্তন করবেন যদি আপনার মোবাইলের ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আগ্রহী থাকেন।

 সর্বদা আসল চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জ দেওয়া ‌:

সর্বদা আসল চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জ দেওয়া ‌

আমরা অনেকেই একটা ভুল করে থাকি যে কোন চার্জার দিয়ে আমাদের মোবাইল চার্জ দিয়ে থাকে এটা একটা মারাত্মক ভুল এটা আপনার মোবাইলের ব্যাটারিকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার মোবাইল এর সঙ্গে পাওয়া কোম্পানির সেই আসল চার্জার দিয়ে আপনার মোবাইলকে চার্জ করতে, এই কথাটা অবশ্যই আপনার মাথায় রাখবেন কারণ অন্য যেকোন চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জ দিলে আপনার মোবাইলের তাই তাই অত্যাধিক গরমে কারণে বিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় এতে আপনার চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

এছাড়াও অত্যাধিক গরম পরিবেশের মধ্যে চার্জে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এতে আপনার ব্যাটারির উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

 বারবার চার্জ দেওয়া :

বারবার চার্জ দেওয়া

বারবার চার্জে দিলে ব্যাটারির চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা হাঁস পেয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি যতটা প্রয়োজন ততটুকুই আপনার মোবাইলের ব্যাটারিকে চার্জ করবেন ,তবে মনে রাখবেন সম্পূর্ণ ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়া পর্যন্ত কখনোই অপেক্ষা করবেন না এতেও আপনার ব্যাটারিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

যখন দেখবেন আপনার মোবাইলের চার্জ অনেক কমে গেছে তখনই চার্জ করবে এতে আপনার ব্যাটারি স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

 অধিক সময় ধরে চার্জে রাখা :

অধিক সময় ধরে চার্জে রাখা

১০০% এর নিচে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ থাকলে ভালো হয় আপনি আপনার ব্যাটারির চার্জ ৯৫% থেকে ৯৯ পার্সেন্ট পর্যন্ত রাখতে পারেন এটা আপনার ব্যাটারির পক্ষে ভালো হবে ।

অনেকে রয়েছেন যারা তাদের মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ ১০০% হয়ে গেছে তবুও তাদের মোবাইলকে চার্জে বসিয়ে রাখে। নিয়মিতভাবে এই অবস্থায় মোবাইল চার্জ দিলে আপনার ব্যাটারির স্বাস্থ্য কে ক্ষতি করতে পারে তাই আপনি কখনোই এইভাবে আপনার মোবাইলকে চার্জ করবেন না।

অল্প ওয়াটের চার্জারের ব্যবহার ‌:

আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন স্লো চার্জার এর ব্যবহার করতে যেমন ১২ ওয়াটের চার্জার। কখনোই আপনি হাই ওয়াটের চার্জার ব্যবহার করবেন না। হাই ওয়াতের চার্জার খুব দ্রুত চার্জ করলেও এটি আপনার ব্যাটারির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ধরনের চার্জার ব্যবহার করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায় তাই চেষ্টা করবেন অল্প ওয়াটের চার্জার ব্যবহার করতে সে গলিতে আপনার ব্যাটারি লম্বা সময় ধরে চলতে থাকবে।

চার্জ অবস্থায় মোবাইলের ব্যবহার :

চার্জ অবস্থায় মোবাইলের ব্যবহার

মোবাইল ব্যবহার করা অবস্থায় কখনোই আপনি আপনার মোবাইলকে চার্জে দিবেন না এতে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

এর কারণ হলো যখন আমরা মোবাইল চার্জে দিই তখন ব্যাটারির ভিতরে তড়িৎ সংযোগ হতে থাকে এ অবস্থায় যদি আমরা মোবাইল ব্যবহার করি তাহলে সেই সঙ্গে তড়িৎ বিয়োজন ঘটে।
তড়িৎ এর সংযোগ এবং বিয়োজক ব্যাটারির মধ্যে সৃষ্টি হওয়ার কারণে আপনি খেয়াল করবেন আপনার মোবাইল গরম হয়ে ওঠে এতে আপনার ব্যাটারির স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় । তাই আপনি এ অবস্থা সর্বদা এড়িয়ে চলবে।পাস

কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে:

ব্যাটারি সেভিং মোড ব্যবহার করা :

ব্যাটারি সেভিং মোড
কখনো আপনি আপনার মোবাইলে থার্ড পার্টি এপ্লিকেশন ব্যাটারি সেভিং মোড ব্যবহার করবেন না। যদি আপনি আপনার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ বাঁচাতে চান এবং ব্যাটারিকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনার মোবাইলের মধ্যে থাকা ব্যাটারি সেভিং মোড অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার ব্যাটারির চার্জ বাঁচাতে সাহায্য করবে ।

 অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার এর ব্যবহার :

আপনি আপনার মোবাইলে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার কখনোই ব্যবহার করবেন না । কারণ এই অতিরিক্ত এপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার গুলি আপনার ব্যাটারি শক্তি ব্যবহার করে থাকে। এতে আপনার ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকে।

 মোবাইল স্ক্রিনের অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা ব্যবহার :

আপনি আপনার মোবাইলের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস বা উজ্জ্বলতা উচ্চ লেভেলে রাখবেন না এতে বেশি পরিমাণ ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার হয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু মোবাইলের উজ্জ্বলতা ব্যবহার করুন।

প্রয়োজনে আপনি অটো ব্রাইটনেস সিস্টেমটি আপনার মোবাইলে অন রাখুন এতে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির শক্তি অনেক বাঁচবে।

 টাইম আউট বা স্ক্রিন লক :

টাইম আউট বা স্ক্রিন লক

আপনি আপনার মোবাইলের টাইম আউট বা স্ক্রিন লক এক মিনিটের উপরে সেট করবেন না কারণ এতে মোবাইলের স্ক্রিনের লাইট অন থাকে তার ফলে অতিরিক্ত ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করে থাকে ।

প্রয়োজনে আপনি মোবাইলের স্ক্রিন লক এক মিনিটের নিচে সেট করুন এতে ব্যাটারি শক্তি বাঁচবে।

 ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন :

ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন

আপনি সর্বদা লক্ষ্য রাখবেন আপনার মোবাইলের background এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় apps বা সফটওয়্যার চালু আছে কিনা এগুলি আপনার মোবাইলের ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে।

 wi-fi ,  ব্লুটুথ,  ও জিপিএস/ GPS  চালু রাখা :

প্রয়োজন ছাড়া অযথাই wi-fi , ব্লুটুথ, ও জিপিএস/ GPS কখনো চালু রাখবেন না। এগুলি চালু থাকলে অটোমেটিক ভাবে স্ক্যান হতে থাকে এবং আপনার ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করে থাকে। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন এটি সর্বদা অফ করে রাখবেন, যখন প্রয়োজন তখনই অন করবেন।

অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বা পুশ বিজ্ঞপ্তিগুলি ব্যবহার না করা :

যেসব অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করেন না সেগুলির নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখবেন এবং অপ্রয়োজনীয় পুশ বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করবেন না এগুলি আপনার ব্যাটারির শক্তিকে ব্যবহার করে থাকে।

 এয়ারপ্লেন মোডের ব্যবহার করা :

চার্জ দেওয়ার সময় আপনি এয়ারপ্লেন মোড অন করে চার্জ দিতে পারেন এতে ব্যাটারির স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। 
এয়ারপ্লেন মোডের ব্যবহার করা

এছাড়াও যেসব স্থানে নেটওয়ার্কের সমস্যা বা যেসব স্থানে ফোন অ্যালাউ করে না সেই সব স্থানে আপনি আপনার মোবাইলকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখতে পারেন এতে আপনার ব্যাটারির অতিরিক্ত শক্তি বেঁচে যাবে। যেমন বিমানের মধ্যে ফোন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ বা প্রার্থনার স্থানে অথবা কোন কোন অফিসের মিটিংয়ে।

অল্প রিফ্রেশ রেট এর মোবাইল ব্যবহার :

আপনি চেষ্টা করবেন অল্প রিফ্রেশ রেট এর মোবাইল ব্যবহার করতে এতে কম রিপ্লেস হয় তাই ব্যাটারি কম ব্যবহার হয়।

অ্যামোলেড (AMOLED) স্ক্রিনের বা ডার্ক মোড এর ব্যবহার :

সর্বদা চেষ্টা করবেন ডার্ক মোড বা অ্যামোলেড স্ক্রিনের ব্যবহার করতে এতে ব্যাটারির শক্তি কম ব্যবহার হয় এবং ব্যাটারি স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

 কম্পন বা ভাইব্রেশন ( vibration ) মোডের ব্যবহার :

সর্বদা কম্পন বা ভাইব্রেশন মোড কে অফ করে রাখবেন প্রয়োজন ছাড়া এটি অন করবেন না। কারণ কম্পন সৃষ্টি করতে প্রচুর তড়িৎ শক্তির প্রয়োজন হয় ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করেই উৎপন্ন হয়।

 মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন আপডেট রাখবেন :

মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন আপডেট রাখবেন
আপনার মোবাইলের মধ্যে যেসব সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন সেগুলিকে সবসময় আপটুডেট রাখবেন এতে আপনার ব্যাটারির শক্তি বাঁচবে এবং ব্যাটারিটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

 ব্যাটারি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা :

আপনি আপনার ব্যাটারিকে সর্বদা পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখবেন কোন সমস্যা বুঝিলে সেটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন এতে আপনার ব্যাটারি স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ও দীর্ঘদিন ধরে চলবে।

মোবাইলের সেটিং এর ভিতর ব্যাটারির পর্যবেক্ষণ করার টুল পেয়ে যাবেন সেখানে আপনি দেখতে পারবেন এমন কোন সফটওয়্যার আছে কিনা যেগুলি অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করছে কিনা সেগুলিকে আপনি মোবাইল থেকে সম্পূর্ণ আনইন্সটল করে দিবে।

পর্যবেক্ষণ করার জন্য কোনরকম থার্ড পার্টি টুল ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই এতে অতিরিক্ত ব্যাটারি খরচ বাড়বে। আপনি এই ত্রুটি মোবাইলের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।

 অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার :

আপনি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না ইন্টারনেট ব্যবহার করলে বেশি চার্জ হয় হয় তাই যতটা সম্ভব আপনি ইন্টারনেট কম ব্যবহার করবেন এতে আপনার ব্যাটারির লাইফ আরো বেড়ে যাবে।

 হাই কলেটি গেম খেলা :

অতিরিক্ত হাই কোয়ালিটি গেম খেলা থেকে বিরত থাকুন কারণ এটি আপনার মোবাইলে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে এবং প্রচুর ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করে থাকে।

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা :

প্রয়োজন ছাড়া অকারনে আপনার মোবাইল ব্যবহার করবেন না  যত বেশি আপনি আপনার মোবাইলকে ব্যবহার করবেন তত আপনার ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকবে তাই প্রয়োজন না থাকলে মোবাইলকে রেস্ট দেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো হবে এতে আপনার ব্যাটারি দীর্ঘদিন লাস্টিং করবে এবং হেলদি থাকবে।

Conclusion / উপসংহার :

উপসংহারের আমি বলতে চাই যে সব ব্যাটারি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে একদিন তার কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে তবে আপনি যদি এই সমস্ত পয়েন্টগুলি অনুসরণ করে থাকেন তাহলে  আপনার ব্যাটারির স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকবে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url